بسم الله الرحمن الرحىم
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আজকে আমি কালেমা তৈয়্যেবা ও তার মার্যাদা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
কালেমা তৈয়্যেবাঃ
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
অর্থ - আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।
আবদুল হামিদ ইবনে বায়ান ওয়াসিতী (র) মুয়ায ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে কোন ব্যক্তি একবার সাক্ষ্য দিয়ে মৃত্যু বরণ করলে , যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই আর আমি আল্লাহর রাসূল।আর উক্ত সাক্ষ্য বিশ্বাসী হৃদয়ের দিকে প্রত্যবর্তন করবে ( অর্থাৎ খালিস দিলে সাক্ষ্য দিলে) । আল্লাহ অবশ্যই তাকে মাগফেরাত দান করবেন। ইবনে মাজাহ ৩৭৯৬
রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছে- আমাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে যতক্ষন না তারা বলে: (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলাল্লাহ) আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ রাসূল। যখন এটা তারা বাস্তবায়ন করবে, আমার থেকে তাদের রক্ত ও সম্পদ নিরাপদ করে নিবে, তবে কালিমার হক ব্যতীত এবং তাদের হিসাব আল্লাহর উপর। (সহীহ বুখারী-২৫)
আল্লামা বজ্জিজি আপন মাছনাদে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাকের আরশের সম্মুখে একটি নূরের স্তম্ভ আছে, যখন কোনো ব্যক্তি দুনিয়াতে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে থাকে তখন আপনা আপনি সে নূরের স্তম্ভটি কাঁপতে থাকে। তখন আল্লাহ পাক বলেন, হে স্তম্ভ চুপ কর, কেঁপো না। তখন স্তম্ভটি আরজ করবে, হে আল্লাহ পাক, যে পর্যন্ত তুমি কালেমা পাঠকারীকে মাফ না কর, সে পর্যন্ত আমি কি করে চুপ করব? তখন মাবুদের পক্ষ থেকে হুকুম হবে, আমি তাকে মাফ করে দিলাম। এ কথা শোনামাত্র স্তম্ভটি চুপ হয়ে যাবে।
এ পবিত্র কালেমা সম্পর্কে আল্লাহ পাক কোরানুল করীমে এরশাদ করেন কালেমা তাইয়্যেবার উদাহরণস্বরূপ যেমন একটি পবিত্র বৃক্ষ যার শিকড় জমিনের সঙ্গে সংযুক্ত আর উহার শাখা আকাশের দিকে তদ্রুপ কালেমা তাইয়্যেবা দুনিয়াতে আর উহার নূরের শাখাটি স্তম্ভ স্বরূপ সপ্ত আকাশের ওপর।
তাফছিরে রুনুল বায়ন নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে, দাহিয়া কালবী একজন কাফের ছিল। দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার তার খুবই আগ্রহ ছিল এবং হুজুর পাক (সাঃ) অধিকাংশ সময় তার ইসলাম গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করতেন, কেন না তার সঙ্গে তার আত্মীয় স্বজনও প্রায় সাতশ ছিল। এই একটি লোক মাত্র ইসলাম গ্রহণ করলে, সাতশ লোকও চির শান্তিময় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যায়। যাক অবশেষে হুজুর (সাঃ) এর দোয়া মঞ্জুর হল। একদিন আপনা আপনি হঠাৎ তার অন্তঃকরণে ইসলামের মহব্বত, সত্যতা ও অনুপ্রেরণা জাগ্রত হল এবং মুসলমান হওয়ার জন্য হুজুর (সাঃ) এর সমীপে আসতে লাগল। এদিকে হযরত জিব্রাইল (আঃ) হজুর (সাঃ) কে সুসংবাদ প্রদান করলেন যে, ‘হে নবী আল্লাহ পাক আপনার নিকট ছালাম প্রেরণ করে বলেছেন যে, দাহিয়া-কালবী আপনার খেদমতে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য আসছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই দাহিয়া কালবী হুজুর সমীপে হাজির হল। হুজুর (সাঃ) তাকে দেখে আপন চাদর মোবারক নিজ স্কন্দ মোবারক হতে নামিয়ে তাকে বসবার জন্য জমিনের ওপর বিছিয়ে ছিলেন।
ইসলাম ধর্মে বিধান আছে যে, যদি কোনো কওমের নেতৃস্থানীয় বা সম্মানিত কোনো লোক তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়, তখন তার সম্মান কর। সুতরাং হুজুর (সাঃ) তার সম্মানার্থে আপনি চাদর মোবারক বসবার জন্য বিছিয়ে দিলেন। তারপর দাহিয়া-কালবী হুজুর (সাঃ) এর পূত-পবিত্র চরিত্র ও আপন শত্রুর প্রতি অমায়িক ব্যবহার দেখে অশ্রু বিসর্জন করতে করতে চাদর জমিন হতে তুলে চুমো দিয়ে চোখে লাগিয়ে মাথার ওপর রেখে অতি বিনয় ও নম্রতা সহকারে বলতে লাগলো, হে নবী আমাকে ইসলাম ধর্মের শর্ত সমূহে বলে দিন এবং কালেমা তৌহিদ শিক্ষা দিয়ে দীক্ষিত করুন। তখন নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করলেন, হে দাহিয়া বল তুমি, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মদুর রাসুল্লাহ’। দহিয়া-কালবী কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করে কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যেতে লাগলেন। তখন নবী করীম (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন হে দাহিয়া বল তুমি কাঁদছ কেন? দাহিয়া কালবী উত্তর, হুজুর আমি বড় পাপ করেছি, আল্লাহ পাকের দরবারে একটু আরজ করুন, আমার পাপ মোচনের কি কোনো উপায় হতে পারে? যদি আমাকে আপনি হত্যা করে ফেলেন তাও আমি অম্লানবদনে শিরোধার্য করে নেবো। আর যদি আমার যাবতীয় ধন-সম্পদ আল্লাহ পাকের রাস্তায় বিলিয়ে দিতে হয় তাও দেব।
তবুও যেন আমার পাপ মাফ হয়ে যায়। হুজুর (সাঃ) দাহিয়া কালবীর এরূপ অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে নবী আমি আমার কওমের সর্দার। আমি লজ্জায় কারণে ৭০জন মেয়ে জীবিত হত্যা করেছি। হে আল্লাহর নবী আমার এ পাপ কি মাফ হবে? হুজুর (সাঃ) দাহিয়ার এ কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে অঙ্গুলি দন্ত মোবারকে রাখলেন এবং তার জুলুমও অত্যাচারের প্রতি অবাক হয়ে পড়লেন, আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন, হায় এ হেন জঘণ্য পাপ কিরূপে মাফ হতে পারে? এ দিকে দাহিয়া হুজুরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ক্রন্দন করতেছে, অপরদিকে হঠাৎ জিব্রাইল (আঃ) হুজুর (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলেন, হে নবী (সাঃ) আল্লাহরাব্বুল আলামীন আপনার নিকট ছালাম প্রেরণ করেছেন, আপনি দাহিয়াকে বলে দেন যে, দাহিয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মদুর রাসুলুল্ল্যাহ পড়ার কারণে আল্লাহ পাক তার ৬০ বছরের মূর্তি পূজা ও কুফরী এবং ৬০ বছরের যাবতীয় পাপরাশি আর ৭০ জন নিস্পাপ মেয়েকে বিনা অপরাধে হত্যা করার যাবতীয় পাপ মার্জনা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম ধর্মগ্রহণ করলে পূর্বেও যাবতীয় পাপ মাফ হয়ে যায়। আল্লাহ পাকের এ হুকুম মাত্র হুজুর (সাঃ) কাঁদতে কাঁদতে আকুল হয়ে ওঠলেন, উপস্থিত ছাহাবাগণও কাঁদতে লাগলেন, আর দাহিয়া কালবী তো ক্রন্দন করতে করতে বেহুশ হয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় নবী করীম (সাঃ) এর পবিত্র কালেমা শরীফ পড়ে, তার সারা জীবনের মূর্তি পূজা, শিরক কুফর ও মেয়ে হত্যা ইত্যাদি যাবতীয় পাপ হতে মুক্তি পেয়ে গেল। আচ্ছা আমার উম্মতের মধ্যে যদি কোনো মোত্তাকী পরহেজগার জীবনব্যাপী এ কালেমা পাঠ করতে করতে মরে যায় তবে সে কেন তোমার ক্ষমা পাবে না? হে আল্লাহ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি তোমার ক্ষমা পেয়ে থাকবে।
0 Comments:
Post a Comment